নিজস্ব প্রতিবেদক :থরে থরে সাজানো রয়েছে শীতের সবজি। এক লাইনে কেউ বসেছেন শিম আর আলু নিয়ে; আবার কেউ বসেছেন করলা, টমেটো, ফুলকপি, ওলকপি নিয়ে। আর অনেকেই আবার এসেছেন কাঁচামরিচ, ধনেপাতা আর পেঁয়াজের কলি নিয়ে।
সিলেট নগরের লালদীঘিরপাড় ময়দানের চিত্র এখন এমন। একই মাঠের অপর লাইনে বসে মাছ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সেখানে মিলছে হাওরের ছোট-বড় নানান প্রজাতির মাছ; রয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশ থেকে শুরু করে সাগরের বড় বড় মাছও। আবার শুটকি প্রেমিদের জন্য নানা প্রজাতির শুটকির পসরা সাজিয়ে বসেছেন শুটকি ব্যবসায়ীরা।
এছাড়াও এ মাঠে মিলছে সব ধরনের পোশাক সামগ্রী। কম দামে মিলছে এক্সপোর্টের টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট, ছোটদের পোশাক, আর শীতের পোশাকও। আছে জুতার দোকানও; যেখানে কম দামে মিলছে ছোট আর বড়দের জুতাও। এই এক মাঠেই কম দামে সবধরনের পণ্যের কেনাবেচার কারণে দিন দিন সেখানে ক্রেতাদের ভীড় বাড়ছে সেখানে।
সিলেট নগরের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের অংশ হিসেবে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার হকারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে লালদীঘিরপাড় ময়দানে। এর ফলে নগরের বন্দরবাজার থেকে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে নেই কোনো হকার; নেই ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারাও। এতে স্বাচ্ছন্দে পথ চলতে পারছেন পথচারীরা।
চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে লালদীঘিরপাড় মাঠে চলে গেছেন হকাররা। এ মাঠের অবস্থান সিলেট সিটি কর্পোরেশন ভবনের পেছনেই। বিশাল এ মাঠে আগে ছিল লালদীঘি হকার্স মার্কেটের পুরাতন ভবন। তবে পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে ওই ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। আর সেখানে একটি নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে নগর কর্তৃপক্ষের।
তবে এর আগেই হকারদের সেখানে পুনর্বাসন করা হয়েছে। লটারির মাধ্যমে ১ হাজার জনকে নির্ধারিত স্থানে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ক্রেতাদের সুবিধার্থে মাঠে মাছ ও শুটকি, সবজি এবং বিবিধ নামে সাইনবোর্ড সাটিয়ে পৃথক লেন করে দেওয়া হয়েছে সেখানে। এক মাঠে সব ধরনের পণ্য পাওয়ায় সেখানে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। বিশেষ করে কম দামে সবজি ও মাছ কিনতে পারায় ক্রেতারা ছুটছেন।
সবজি বিক্রেতা সাহাব উদ্দিন বলেন, সিসিকের পক্ষ থেকে লটারির মাধ্যমে তিনি ৭ ফুট বাই ৩ ফুটের দোকানের স্থান বরাদ্দ পেয়েছেন। তিনি আগে রাস্তায় সবজি বিক্রি করতেন। এখন তার নিজের একটি দোকানের জায়গা হয়েছে, এতে তিনি খুশি। প্রথম দিকে ক্রেতা কম থাকলেও যত দিন যাচ্ছে, ক্রেতা বাড়ছে। পৃথক সাইনবোর্ড দিয়ে দোকানের সারি সাজানোর কারণে কোন সারিতে কী ধরণের পণ্য পাওয়া যাবে, তা সম্পর্কে ক্রেতারা সহজেই জানতে পারছেন বলেও জানান তিনি।
শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন মালিক মিয়া। তিনি বলছিলেন, আগে জিন্দাবাজার সড়কের পাশে কাপড় নিয়ে বসতেন। এখন তিনি সিসিকের পক্ষ থেকে লটারিতে জায়গা পেয়ে এখানে এসেছেন। বিক্রি কিছুটা কম। অনেকে এখনও জানেন না কোথায় হকারদের বসানো হয়েছে, এ কারণে ক্রেতা কম আসছেন। তবে প্রচারণার মাধ্যমে তাদের অবস্থানের কথা জনসাধারণকে জানালেএ মাঠে বিক্রি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেখানে কথা হয় গ্রাফিক্স ডিজাইনার আসলামের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, এক মাঠেই সবজিসহ সব কিছু মিলছে। আর অন্য বাজারের তুলনায় এখানে কম দামে সবজি পাওয়া যায়। ফলে তিনি এখানে সবজি কিনতে এসেছেন। এখানে হকারদের সরিয়ে আনায় ফুটপাত দখলমুক্ত হয়েছে; এতে পথচারীরা স্বাচ্ছন্দে হাঁটতে পারছেন বলে জানান তিনি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরকে আধুনিক স্মার্ট সিটি হিসেবে রূপান্তরে নগরজুড়ে উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। এর অংশ হিসেবে সড়ক সৌন্দর্যকরণ কাজও করা হচ্ছে। পাশাপাশি নগরের প্রাণকেন্দ্রের সড়কগুলোর ফুটপাত হকারমুক্তও করা হচ্ছে। এ কাজ করা একার পক্ষে সম্ভব নয়, এ কারণে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে হকারদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।